SATT ACADEMY

New to Satt Academy? Create an account


or

Log in with Google Account

ষষ্ঠ শ্রেণি (দাখিল) - বাংলা - বুঝে পড়ি লিখতে শিখি | NCTB BOOK

সব ধরনের লেখায় তথ্য থাকে। উপাত্ত থাকে বিভিন্ন ধরনের ছক, সারণি ও বিষয়নের মধ্যে। এসব তথ্য ও উপাত্তকে বিশ্লেষণ করা হয় যেসব লেখায়, সেগুলোকে বিশ্লেষণমূলক লেখা বলে। বিশ্লেষণমূলক লেখা দুই ধরনের: (১) তথ্য বিশ্লেষণমূলক লেখা ও (২) উপাত্ত বিশ্লেষণমূলক লেখা। নিচে একটি তথ্য বিশ্লেষণমূলক লেখা দেওয়া হলো। এটি আবদুল্লাহ আল-মুতীর লেখা। তিনি বিজ্ঞান বিষয়ক লেখক হিসেবে পরিচিত। বিজ্ঞানের অনেক জটিল বিষয়কে তিনি সহজ করে উপস্থাপন করেছেন। তাঁর কয়েকটি বিখ্যাত বই: ‘এসো বিজ্ঞানের রাজ্যে”, “আবিষ্কারের নেশায়’, ‘রহস্যের শেষ নেই’ ইত্যাদি।

 

কীট পতঙ্গের সঙ্গে বসবাস

আবদুল্লাহ আল-মুতী

 

প্রজাপতি আর মৌমাছিরা ফুল থেকে মধু খেতে গিয়ে ফুলে ফুলে পরাগযোগ ঘটায়, তাতেই খেতে ফসল ফলে, গাছে ফল ধরে। এসব উপকারী কীটপতল ধ্বংস হলে কমে যায় খেতের ফসল, বাগানের ফলন। তাছাড়া লোকামাকড় খেয়ে বাঁচে অনেক পাখি আর অন্যান্য প্রাণী। কাজেই ঢালাওভাবে পোকামাকড় মেরে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে মারা পড়তে থাকে এসব প্রাণী।

ক্রমে ক্রমে আরো মারাত্মক একটা বিপদের কথা বিজ্ঞানীরা জানতে পেলেন। সে হলো অনেক জাতের কীটনাশকের গুনাগুন সহজে নষ্ট হয় না। এগুলো পানির মধ্য দিয়ে, খাবারের মধ্য দিয়ে খুব অল্পমাত্রায় প্রাণীর দেহে বা মানুষের দেহে ঢুকে সেখানে চর্বিতে বা আর কোথাও জনে থাকতে পারে। এভাবে কীটনাশক জমে ওঠার ফলে তার বিষক্রিয়ায় শুধু যে নানা রকম মারাত্মক রোগ হতে পারে তা নয়, মৃত্যুও ঘটতে পারে।

ধরা থাক কয়েক লাখ গাছের ওপর ছড়ানো হলো মাত্র এক গ্রাম কীটনাশক। এতে পাতার ওপর কীটনাশকের পরিমাণ হলো হয়তো মাত্র এক কোটি ভাগের এক ভাগ। তারপর এক লাখ পোকায় খেল এসব গাছ। পোকাদের শরীরে কীটনাশকের পরিমাণ দাঁড়াল দশ লাখে এক ভাগ। এবার শ-খানেক পাখি খেল এসব পোকা। পাখিদের শরীরে কীটনাশক হলো প্রতি পায়ে এক ভাগ। এবার একটি বাজ খেল এমনি ক-টি পাখি। তার শরীরে বিষ হলো হাজার ভাগের এক ভাগ। দেখা গেল এভাবে বিষের করলে অনেক নদী-হ্রদের পানিতে মাছ মরে যাচ্ছে, বিষাক্ত মাছ খেয়ে নানা জাতের পাখিও মরে শেষ হয়ে যাচ্ছে।

সবটা মিলিয়ে অবস্থা দাঁড়াচ্ছে এই যে, কীটনাশক ব্যবহার করার ফলে আমাদের চারদিকে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হয়ে পড়ছে। তাতে শেষ পর্যন্ত মানুষেরই ক্ষতি হচ্ছে, অথচ যেসব ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ধ্বংস করার জন্য কীটনাশক তৈরি হয়েছিল তারা দিব্যি বিষকে গা-সওয়া করে নিয়ে বংশ বাড়িয়ে চলেছে।

এসব জানাজানি হবার পর আজ বিজ্ঞানীরা আবার প্রাকৃতিক উপায়ে কীটপতঙ্গ দমন করার ওপর জোর দিচ্ছেন। প্রকৃতির স্বাভাবিক ভারসাম্য বজায় থাকলে এমনিতে কীটপতঙ্গ অনেকটা দমন হয়। যেমন কাক, শালিক, চড়ুই, টুনটুনি—এসব পাখি খেতের পোকামাকড় ধরে খায়। কাজেই পাখি কমে গেলে পোকামাকড়ের সংখ্যা বাড়ে। আবার গোসাপ, ব্যাঙ, টিকটিকি এসব প্রাণী এবং অনেক পোকামাকড় ও অন্য পোকামাকড়দের ধরে যায়। গোসাপ, ব্যাঙ নেরে শেষ করলে পোকামাকড়ের সংখ্যা বেড়ে ওঠে।

এখন রাসায়নিক কীটনাশক যতটা সম্ভব কম ব্যবহার করে অন্যভাবে ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ ধ্বংস করার ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে। যেমন, পাটের পুঁয়োপোকা আর মাজরা পোকা মারার ভালো উপায় হলো তাদের ডিম বা অল্প বয়সের কিড়া কুড়িয়ে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া। অনেক পূর্ণবয়স্ক পোকা রাতের বেলা আলোর দিকে ছুটে আসে। এসব পোকাকে সহজেই আলোর ফাঁদ পেতে মারা যায়।

 

শব্দের অর্থ

কিড়া= পোকা, কীট।

কীটপতঙ্গ=  পোকামাকড়।

ঢালাওভাবে= নির্বিচারে।

পরাগযোগ= পরাগরেণু যুক্ত হওয়া।

বিষক্রিয়া=  বিষের কার্যকারিতা।

কীটনাশক=  যে বিষ দিয়ে পোকামাকড় মারা হয়।

গা-সওয়া= সহনীয়।

গুণাগুণ= কার্যকারিতা।

গোসাপ= গুইসাপ।

মাজরাপোকা= ধানগাছের ক্ষতিকর পোকা।

শুয়োপোকা= সারা গায়ে লোমযুক্ত এক ধরনের পোকা।

হ্রদ= এক ধরনের জলাশয়।

 

পড়ে কী বুঝলাম

ক. এই রচনাটি কোন বিষয় নিয়ে লেখা?

খ. লেখাটির মধ্যে কী কী বিশ্লেষণ আছে?

গ. বিবরণমূলক লেখার সাথে এই লেখাটির কী কী অমিল আছে?

ঘ. তথ্যমূলক লেখার সাথে এই লেখাটির কী কী অমিল আছে?

ঙ. এই লেখা থেকে নতুন কী কী জানতে পারলে?

 

বলি ও লিখি 

‘কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ রচনায় লেখক যা বলেছেন, তা নিজের ভাষায় বলো এবং নিজের ভাষায় লেখো।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 

 

কীভাবে তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়

কীটপতঙ্গের সঙ্গে বসবাস’ লেখাটির প্রথম অনুচ্ছেদের চারটি বাক্য খেয়াল করো। এখানে প্রথম বাক্যের তথ্যঃ পোকামাকড় পরাগায়ন ঘটায় বলে ফল ও ফসল হয়। দ্বিতীয় বাক্যের তথ্য পোকামাকড় কমে গেলে ফসলের ফলন কমে যায়। তৃতীয় বাক্যের তথ্য পোকামাকড় মেয়ে বহু প্রাণী বাঁচে। এরপর তিন বাক্যের তথ্য বিশ্লেষন করে চতুর্থ বাক্যে লেখক সিদ্ধান্তে এসেছেন: পোকামাকড় নির্বিচারে মারা ঠিক নয়। এভাবে তথ্য বিশ্লেষণমূলক লেখায় নতুন সিদ্ধান্ত তৈরি হয়।

কীভাবে উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়।

উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয় যেসব লেখায়, সেগুলোকে উপাত্ত বিশ্লেষণমূলক লেখা বলে। উপাত্ত বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে তথ্য তৈরি হয়।

নিচের ছকে কিছু উপাত্ত আছে। এই থকে দেশের নাম, বাঘের সংখ্যা এগুলো হলো উপায়। ছকের উপাত্তগুলো বোঝার চেষ্টা করো এবং দলে আলোচনা করো। 

দেশের নাম

২০১০ সাল পর্যন্ত বাঘের সংখ্যা

২০১৫ সালের জরিপে বাঘের সংখ্যা

বাংলাদেশ

৪৪০ 

১০৬ 

ভুটান

৭৫ 

১০৩ 

কম্বোডিয়া

৫০ 

০ 

ভারত

১৭০৬ 

২২২৬ 

মিয়ানমার

৮৫ 

৮৫ 

নেপাল

১২১ 

১৯৮ 

থাইল্যান্ড

২৫২ 

১৮৯

ভিয়েতনাম

২০

৫ 

উপরের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে বহু তথ্যমূলক বাক্য রচনা করা যায়। যেমন, একটি বাক্য: ভিয়েতনামে মাত্র পাঁচ বছরের মধ্যে চার ভাগের তিন ভাগ বাঘ কমেছে। আবার আরেকটি বাকা হতে পারে এমন: সবচেয়ে বেশি বাঘ আছে ভারতে।

এভাবে এই ছকের উপাত্ত বিশ্লেষণ করে আরও কয়েকটি তথ্যমূলক বাক্য রচনা করো।
 

১.
২. 
৩.
৪.
৫.
৬.
৭.
৮.
৯.
১০.

 

এসব তথ্যমূলক বাক্য ব্যবহার করে একটি অনুচ্ছেদ রচনা করো। শুরুতে একটি শিরোনাম দাও।

 
 
 
 
 
 
 
 
 
 
Content added || updated By